মোঃ মুকুল হোসেনবিশেষ প্রতিনিধি কুষ্টিয়াঃ-
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টিতে গত ৭ই অক্টোবার জমি-জমা সংক্রান্ত জেরে সহিংসতায় ৪জন মারাত্বক জখমে আহত হওয়ার ঘটনায় করা মামলার বাদী মর্জিনা খাতুনের স্বামী রুহুল আমীনকে মামলা তুলে নিতে বলেছেন আসামিরা৷ নয়তো তাঁকে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করার হুমকি দেওয়া হয়েছে৷
এ অভিযোগে আজ(৬ই মার্চ) বুধবার সকালে কুমারখালী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন মারামারি মামলার বাদীনির স্বামী মোঃ রুহুল আমীন ৷
জিডিতে মোঃ রুহুল আমীন উল্লেখ করেন, উক্ত মামলার হুকুমের ৪ নং আসা মী ছরোয়ারসহ সবাই গত অক্টোবার মাসে ৯ তারিখে নিম্ন আদালত থেকে জামিন নেয়৷ এক পর্যায়ে জামিন নিয়ে বাড়ীতে এসে একের পর এক মারপিট, প্রাণনাশের হুমকিসহ রুহুল আমিনকে দিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ৫ ই মার্চ মঙ্গলবার দুপুরে এই মারামারি মামলার ১ নং আসামী সামসুল আলমের বাড়ীর সাথে কাটের মিল ঘরে বসে ২নং আসামী বাবুল ও ৩ নং আসামী ইয়াসিনকে নিয়ে আলাপ আলোচনা করে ও আজ বুধবার সকালে বাদীনির স্বামী রুহুল আমিনকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যার উদ্দেশ্য পান্টি গোলাবাড়ী বাজারের ইসমাইলের চায়ের দোকানের সামনে রাস্তার উপর জনতার সামনে ৪নং হুকুমের আসামী ছরোয়ার প্রকাশ্যে অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হইয়া বাদীনির স্বামী রুহুল আমিনসহ তার পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মারপিট ও প্রাণনাশের হুমকি দেয় ও কোটে যেতে বাঁধা প্রধান করে।
এলাকাবাসী জানাই, বাদী মর্জিনা খাতুনের স্বামী রুহুল আমীন তখন তার পান্টি বাজারের কাপুড়ের দোকান হইতে বাসায় ফিরছিলেন৷ এ সময় কুমারখালী থানার ০৭/ ৩১৫ নং মারামারি মামলার হুকুমের আসামি ছরোয়ার বিশ্বাস (৬৩) পিতা মৃত কাশেম বিশ্বাস ও ঐ একই মামলার আসামী সামসুল আলম তাঁকে ফাঁকা রাস্তায় একা পেয়ে মামলা তুলে নিতে মারপিটসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়। পরবর্তিতে রুহুল আমীনের সাথে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মামলা তুলতে না চাইলে আসামী ছরোয়ার বিশ্বাস ধারালো অস্ত্র বের করে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয়।
ঘটনার সত্যতা অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানতে পারি,
দীর্ঘদিন ধরে সামসুল আলম ও রুহুল আমিনের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধের জেরে গত নয়মাস আগে তাদের বাড়ির মোট ২৯ শতক জমি সমান দু’ভাগে ভাগ- বন্টন করে দেয় এলাকার সন্মানীয় গণ্যমান্য মাতুব্বার ব্যাক্তিরা। তারপর থেকে একের পর এক চলে আসছে বিরোধ। এই বিরোধের জেরে স্থানীয় মাতুব্বারগনদের সমান অংশ ভাগ করে দেওয়া জায়গাতে রুহুল আমীন দোকন ঘর করতে গেলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে লাঞ্চিত হয়েছে ও এখন পর্যন্ত প্রাণনাশের হুমকিও প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছে সামসুল আলম, ছরোয়ার ,বাবুল,ইয়াছিনসহ স্থানীয় কিছু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু অসাধু ব্যাক্তিরা।
জমি- জমা সংক্রান্ত জের ধরে দীর্ঘদিন সামসুল আলম জাল দলিল করার কারণে রুহুল আমীনের পরিবারের বিরোধ চলে আসছে ও সামসুল আলম তারই ভাই রুহুল আমীনকে জমি-জমা ভাগ করে দেওয়া অংশে কাজ করতে গেলে বাধা প্রদান করা, ও সঠিকভাবে করে জমি- জমা ভাগকরে না দেওয়া কে কেন্দ্র করে এই বিরোধের জেরে গত ১৬ ই ডিসেম্বর২০২২, গত ৭ই অক্টোবর ২০২৩ ইং তারিখে বিনা কারনে রুহুল আমীনের পরিবারের লোকজনকে আসামী সামসুল আলম, ছরোয়ার সহ বেশ কয়েকজনকে সাথে নিয়ে ব্যাপক ভাবে মারধর করে। পরবর্তীতে রুহুল আমিনসহ তার পরিবারের লোকজন সবাই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়। কুমারখালী থানায় হুমকি দেওয়ার জন্য বেশকয়েকটি জিডিও করে রুহুল আমীনের পরিবার।
রুহুল আমিন জানাই, আমার বাবার বসতবাড়ীর মোট সম্পওি ২৯ শতক আছে। আমরা দু’ ভাই, গত ১০ বছর ধরে আমার বাড়ীতে এই জমিজমার বিষয় নিয়ে ৬৩ বার শালিশ হয়। এই গত শালিশের মাতুব্বারদের রায় গুলো আমার ভাই সামসুল আলম কোন ভাবেই মানেন না। গত ছয় মাস আগে আমার নিজ বাড়ীতে মাতুব্বারগন ও এলাকার লোকজন নিয়ে বসতবাড়ীর ২৯ শতক জমি শালিশের মাধ্যমে দু’ ভাইয়ের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ বন্টন করে দেয়। এতে করে আমার বসতবাড়ীর জমির অংশ আমাকে পেছনে বেশি ও অল্প জমি রাস্তার পাশ থেকে সর্বমোট ১৪ শতক ৫০ পয়েন্ট করে ভাগ করে দেয় ও আমার ভাই সামসুল আলমকে রাস্তার সাথে থাকা ভালো জমি ১৪ শতক ৫০ পয়েন্ট ভাগ করে দেয়। আমার বসতবাড়ীর সামনের জমি নিয়ে আমাকে পেছনের জমি দিয়ে প্রায় জমির মূল্য অনুসারে আমাকে আনুমানিক ৩০ লক্ষ টাকা ঠগায়। তারপরও আমি আমার ভাই ও মাতুব্বারদের কথায় জোরপূর্বক মেনে নিতে বাধ্য করে। বর্তমানে আমার বসতবাড়ীর উপর ঘর ও রাস্তার পাশে থাকা জমির উপর গত কিছু দিন আগে ছয়রুম বিশিষ্ট মার্কেট করেছি ও মার্কেটের কিছু অংশ কাজ বাকী রেখে কাজ বন্ধ করে রেখেছিলাম। এখন মার্কেটের বাকী অংশের কাজ করতে গিয়ে নানা রকম ভাবে ভয়- ভীতি, হেনস্তা, ও প্রাণনাশের হুমকি প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছে। পরে আমার ছেলে মোঃ মুকুল হোসেন গত ৩/৯/২০২৩ তারিখে কুমারখালী থানায় গিয়ে একটি জিডি করে এসেছিল। এরপরও এলাকার অসাধু ব্যাক্তিদের টাকা দিয়ে বুদ্ধি- পরামর্শ নিয়ে মার্কেটের কাজে বাধা প্রধান করছে সহ আমাকে হত্যার নানা পরিকল্পনা করে যাচ্ছিল। আমাকে সহ আমার পরিবারকে অকত্য ভাষায় গালা গালি সহ ঝগড়া বিবাদ বাধানোর চেষ্টাও অব্যহত রেখেছেলি। পরবর্তিতে বিনাকারণে মারামারি করায় বাদী মর্জিনা খাতুন কুমারখালী থানায় একটি জি- আর মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ০৭/ ৩১৫।
এ ব্যাপারে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম বলেন, একটি হুমকির জিডি পাওয়া গেছে৷ তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
হুমকির ব্যাপারে ছরোয়ারের বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে৷