দলীয় আন্দেলনকে বেগবান করতেই গাজীপুরে কারখানা-গাড়ীতে অগ্নিসংযোগ
মোঃ সাজ্জাকুল ইসলাম রাজ্জাক
দলীয় আন্দোলনকে বেগবান করতে উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে পোশাক শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনে যোগ দিয়ে গার্মেন্টস কারখানায় ও গাড়ি ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গাজীপুরে ছাত্রদলের নেতার সম্পৃক্ততার প্রমান মিলেছে। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্র পর্যালোচনা তাকে সোমবার ঢাকার হাজারীবাগ থানা এলাকা হতে গ্রেপ্তার করেছে গাজীপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত মোঃ মোশারফ হোসেন রিপন ওরফে মোঃ রিপন হোসেন ওরফে রিপন মাহমুদ (২৭), গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বড়ইছুটি এলাকার মোঃ সুরুজ আল মামুনের ছেলে এবং কালিয়াকৈর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ন-আহবায়ক।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক রিপন ও তার সহযোগীরা কালিয়াকৈরস্থ লিডা ও ফর্টিস গার্মেন্টস এবং কোনাবাড়ীস্থ এবিএম ফ্যাশন্স লিমিটেডে অগ্নি সংযোগ ও ভাংচুর এর ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার সকালে গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুব আলম মহানগর পুলিশের সদর দপ্তরের কনফারেন্স রুমে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ওই তথ্য জানিয়েছেন। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. জিয়াউল হক, মোহাম্মদ আহমারুজ্জামান, গাজীপুর জেলা পুলিশের সুপার (এসপি) মো. সফিকুল ইসলামসহ গাজীপুর মহানগর পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম জানান, ৩১ অক্টোবর পোশাক শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির নামে আন্দোলন চলাকালে গাজীপুর মহানগরসহ গাজীপুর জেলাধীন বিভিন্ন গার্মেন্টস্ফ্যাক্টরিসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা, হাসপাতাল ও বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নি সংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পরদিন ১ নভেম্বর গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার, গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার, গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসক এবং সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে নাশকতার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ গার্মেন্টস্ ফ্যাক্টরিসমূহ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে ফ্যাক্টরি কতৃর্পক্ষ পরিদর্শনকারীদের তাদের ফ্যাক্টরি ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তখন পুলিশ কমিশনার মহোদয় সাংবাদিকদের সম্মুখেই ফ্যাক্টরির কতৃর্পক্ষসহ উপস্থিত সকলকে পরিদর্শণকারীরা আশ্বস্ত করেন যে, পুঙ্খানুপঙ্খ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষন ও যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে কারখানা-গাড়িতে অগ্নিসংযোগকারী ও ভাংচুরে জড়িত সকল দুষ্কৃতিকারীকে দ্রত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
কমিশনার বলেন, পরে ওইসব ঘটনার ফুটেজ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের তদন্তকালে বিভিন্ন গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও স্থির চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, গাজীপুর জেলাধীন সফিপুরস্থ লিডা ও ফর্টিস গার্মেন্টস্ লিঃ এর অভ্যন্তরে ঢুকে দুষ্কৃতকারীরা দলবদ্ধ হয়ে লাঠি সোটা নিয়ে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর ও দাহ্য পদার্থ ঢেলে গাড়ীতে অগ্নি সংযোগ করেছে। সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ, স্থিরচিত্র পর্যালোচনা, গার্মেন্টস্ কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষদশীর্দের বর্ণনামতে এবং ওই এলাকায় স্থানীয় লোকজনের সনাক্তমতে গাড়ী ভাঙ্গচুরকারী দলের নেতৃত্বদানকারী দাহ্যপদার্থ ভরা পাত্র বহনকারী ও অগ্নি সংযোগকারী ব্যক্তিটিকে হলো ছাত্রদল নেতা মোঃ রিপন হোসেন। তিনি কালিয়াকৈর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ন-আহবায়ক এবং উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রার্থী। ঘটনার পরপরই তিনি এলাকা থেকে পালিয়ে যান এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ করে রাখেন। রিপন তার অন্যান্য সহযোগীসহ গত ৩০অক্টোবর কোনাবাড়ী এলাকার এবিএম ফ্যাশন্স লিমিটেড-এ এর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত। এ ঘটনায় কোনাবাড়ী থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত রিপন পুলিশের কাছে স্বীকার করেন যে, তিনিসহ তার দলীয় সহযোগীরা রাজনৈতিক কার্যক্রমের অংশ হিসাবে দলীয় আন্দোলনকে বেগবান ও প্রভাবিত করতে এবং দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে শ্রমিকদের আন্দোলনে যোগ দিয়ে কালিয়াকৈরস্থ লিডা ও ফর্টিস গার্মেন্টস এবং কোনাবাড়ীস্থ এবিএম ফ্যাশন্স লিঃ এ অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর এর ঘটনায় অংশগ্রহন করেছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় পূর্বে আরো চারটি মামলা রয়েছে