মোঃ কাওসার আহমেদ জয়:-
পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি:-
পটুয়াখালীর এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে সহকারী শিক্ষকের বেতন-ভাতার বকেয়া অংশ আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ঐ প্রধান শিক্ষক হচ্ছেন জেলার লতিফ মিউনিসিপ্যাল সেমিনারী পটুয়াখালীর প্রধান শিক্ষক মোঃ জাকির হোসেন (সেলিম)। আর ভুক্তোভোগী সহকারী শিক্ষক হচ্ছেন মোঃ নুরুজামান। তিনি একই বিদ্যালয়ের ভৌতবিজ্ঞানের শিক্ষক। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের এক কল রেকর্ড পাওয়া গেছে। যেখানে ঐ সহকারি শিক্ষকের এমপিও’র বকেয়া অর্থ প্রাপ্তীর জন্য এক লক্ষ টাকা দাবি করছেন। যেটা তিনি প্রতিষ্ঠানটি সভাপতি পৌরসভার সাবেক মেয়র ডাঃ মোঃ শফিকুল ইসলাম এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মুজিবুর রহমানকে দেবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লতিফ মিউনিসিপ্যাল সেমিনারী’র ভৌতবিজ্ঞানের সহকারি শিক্ষক মোঃ নুরুজামান এনটিআরসিএ’র ২য় গণবিজ্ঞাপ্তিতে পটুয়াখালী বোতল বুনিয়া স্কুল এন্ড কলেজে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে গত ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারিতে যোগদান করেন এবং ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। এনটিআরসিএ ৩য় গণবিজ্ঞাপ্তিতে আবেদন করে তিনি লতিফ মিউনিসিপ্যাল সেমিনারী পটুয়াখালীতে সুপারিশ প্রাপ্ত হন। এনটিআরসিএ সুপারিশ পত্র প্রদান করার পর অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক তাকে যোগদানের জন্য টাকা দাবি করে ২০২২ সালের ০১ ফেব্রুয়ারি তারিখে তাকে যোগদান করান। যোগদানের পর থেকে তিনি নিয়মিত এই সহকারি শিক্ষকের কাছে টাকা চেয়ে আসছেন টাকা না দেওয়াতে প্রধান শিক্ষক মোঃ জাকির হোসেন তার কক্ষে নিয়ে গালাগাল করেন এবং বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিতে থাকেন। নিয়মিত হুমকি প্রদানের এক সময় প্রধান শিক্ষক বলেন, আমি অত্র প্রতিষ্ঠানে সভাপতিকে টাকার খাম দিয়ে এখানে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ নিয়েছি, কাজেই আমাকে এক লক্ষ টাকা দিতে হবে।
ভুক্তোভুগী শিক্ষক নুরুজামান জানান, প্রধান শিক্ষকের নিয়মিত গালাগালি এবং হুমকি প্রদান ও টাকা চাওয়ার বিষয়টি আমি অত্র প্রতিষ্ঠানের সহকারি প্রধান শিক্ষককে অবহিত করলে তিনি প্রধান শিক্ষকের টাকা চাওয়া এবং গালাগাল করার বিষয়টি ডকুমেন্ট স্বরুপ রাখার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন, আমি তখন থেকে প্রধান শিক্ষকের টাকা চাওয়া ও গালাগাল করার বিষয়টি ফোনে রেকর্ড করে রেখেছি যা আমার কাছে সংরক্ষিত আছে।
তিনি জানান, এক পর্যায়ে তার দাবিকৃত একলক্ষ টাকা না দেওয়াতে তিনি অসদচারের কথা উল্লেখ করে আমাকে ১ম শোকজ লেটার প্রদান করেন, আমি উক্ত শোকজ লেটার গ্রহণ করি এবং সন্তোজনক জবাব দেই।
নুরুজমান বলেন, কারিগারি অধিদপ্তর থেকে নাম কর্তন আসার পর চলতি বছরের ০১ মার্চ তারিখে আমি এমপিওভুক্ত হই। ২০২২ সালের ০১ ফেব্রুয়ারি যোগনাদের তারিখ থেকে এমপিওভুক্ত হবার আগ পর্যন্ত বকেয়া থাকা ১৩ মাসের বেতনের আবেদনের জন্য রেজুলেশনের কথা বললে প্রধান শিক্ষক প্রথমে কোনো কর্ণপাত করেনি। এরপর চলতি বছরের ০৬ জুন তিনি আমাকে রেজুলেশন দেন। ১৩ মাসের বকেয়া বেতনের আবেদনে প্রতিষ্ঠানের ফরওয়ার্ডিং এ স্বাক্ষর করার কথা বললে তিনি বলেন সভাপতি ঢাকায়। আমাকে ০৭/০৬/২০২৩ তারিখ ঢাকায় গিয়ে সভাপতি স্বাক্ষর নিয়ে আসতে বলেলেও তিনি ছুটি দেননি। আমি ০৭/০৬/২০২৩ তারিখ বিদ্যালয়ের অর্ধবার্ষিক পরিক্ষার দায়িত্ব পালন করে বিকাল ৩টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে সভাপতির স্বাক্ষর নিয়ে রাত ৪ টায় পটুয়াখালীতে ফিরে আসি, আমি প্রধান শিক্ষকে বকেয়া বেতন প্রাপ্তির আবেদন অনলাইনে সেন্ট করার জন্য বলি। তিনি আমাকে শ্যামল চন্দ্র হাওলদার (N- 108918) এর সাথে যোগাযোগ করার জন্য বলেন। শ্যামল চন্দ্র হাওলাদার তিনি পটুয়াখালী সদর উপজেলাধীন লাউকাঠী শহিদ স্মৃতি বিদ্যানিকেতনের সহকারি শিক্ষক। তিনি সকল প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দালাল হিসাবে পরিচিত। তার সাথে দেখা করলেও আজ পর্যন্ত অনলাইনে আমার বকেয়া বেতনের কপি সেন্ট করতে পারিনি।
জানা গেছে, ভুক্তোভুগী শিক্ষক নুরুজামান একজন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী ব্যক্তি এবং দাঁড়ি রাখেন। শুধুমাত্র নামাজ পড়া এবং দাঁড়ি রাখায় তাকে জামায়াত শিবির করে এই ট্যাগ লাগিয়ে এলাকায় প্রচার করেন প্রধান শিক্ষক। অথচ এই শিক্ষক শিক্ষকতা পেশা ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার খোঁজ পায়নি।
এদিকে একই সময়ে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক আমির হোসেনকেও দিতে হয়েছে টাকা। সেই কল রেকর্ডও হাতে রয়েছে। এই ধূর্ত প্রধান শিক্ষক আমির হোসেনের সাথে টাকার জন্য কথা বলতে বলেন। সে (আমির হোসেন) টাকা ছাড়া না পেলে ভুক্তোভুগী এই শিক্ষক কেন পাবেন এটাও বলেন তিনি।
অন্যদিকে প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন এবং ভুক্তোভুগী সহকারি শিক্ষকের একটি অডিও রেকর্ড হাতে রয়েছে। যেখানে প্রধান শিক্ষককে বলতে শোনা যায়, তিনি এক লক্ষ টাকা না পেলে বকেয়া বেতন পাবেন না। অনলাইনে আবেদনের জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে টাকা দিতে হয়, সভাপতিকে টাকা দিতে হয়। তাই এক লাখ টাকা যতদিন তিনি দেবেন না ততদিন তাকে এই অনলাইনে আবেদন সাবমিট করতে পারবেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাকা না পেয়ে ভুক্তোভুগী শিক্ষকের সাথে বাজে আচরণ সহ কোনো কারণ ছাড়াই শোকজ করা ছাড়াও স্কুলে শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করেছেন এই প্রধান শিক্ষক। শুধু তাই নয় অর্থের জন্য প্রথম শ্রেণি অভিক্ষা নামে তিনি নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন না করে মার্চ মাসে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির পরীক্ষা নিয়েছেন। যেখানে মূল্যায়ণ ছাড়া কোনো প্রকার পরীক্ষা না নেওয়ার সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে, রয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কঠোর বার্তা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে লতিফ মিউনিসিপ্যাল সেমিনারী পটুয়াখালী’র প্রধান শিক্ষক মোঃ জাকির হোসেন (সেলিম) এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও পটুয়াখালীর পৌরসভার সাবেক মেয়র ডাঃ মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে ঐ শিক্ষক লিখিত কিংবা মৌখিক কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে কিংবা আমার সহযোগিতা চাইলে আমি বিষয়টি দেখব।